
রূপগঞ্জে বাবা-ছেলের দৌরাত্ম্য: মাদক আর চুরিতে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী
রিপন মিয়া রিপোট
রায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে এক বাবা-ছেলে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাইফুল ইসলাম সমর (৪০), ওরফে টুকাই সমর ও তার ছেলে শাওন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক সেবন, ব্যবসা এবং চুরির সাথে জড়িত থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে।গ্রামের মানুষ জানান, সাইফুল ইসলাম সমর প্রতিদিন ইয়াবা ট্যাবলেট না খেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং অস্বাভাবিক আচরণ করেন। নেশার টাকার যোগান দিতে তিনি নিয়মিত চুরির সাথে জড়িয়ে পড়েন। অনেক সময় প্রতিবেশীর বাড়ি, দোকানপাট কিংবা রাস্তায় ফেলে রাখা জিনিসপত্র হাওয়া হয়ে যায় তার কারণে। স্থানীয়দের মতে, নেশার জন্য তিনি জীবনে কখনো স্থায়ীভাবে কোনো কাজ করেননি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুযোগ নিতে সমর নিজেকে বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। তার এই নতুন পরিচয় মূলত অপরাধ ঢাকার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও গ্রামের মানুষ তাকে চোর ও মাদক টুকাই সমর নামেই চেনে।বাবার পথে হাঁটছে ছেলে সমরের ছেলে শাওন মিয়া বাবার চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নন। কিশোর বয়স থেকেই সে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে। দিন দিন তার নেশা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সে এলাকায় চিহ্নিত চোর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রাতের বেলা ঘর ভেঙে জিনিসপত্র চুরি, দোকানের তালা কেটে টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়া এবং গ্রামবাসীর বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বাবা-ছেলের কারণে গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অশান্তিতে আছেন। রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় ভয়ে অনেকেই সঙ্গে বাড়তি লোক নিয়ে বের হন। অনেক সময় রাতের বেলা অচেনা শব্দ শুনলে মানুষের মনে প্রথমেই আসে—এটা হয়তো সমর বা তার ছেলে শাওনের কাজ। একজন স্থানীয় যুবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকি। কে কখন কী হারাবে, সেটা বলা মুশকিল। এই বাবা-ছেলের কারণে গোটা গ্রামটাই যেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গ্রামের প্রবীণরা বলেন, আগে গ্রামে রাতের বেলা শান্তিতে ঘুমানো যেত। এখন অন্ধকার নামলেই মানুষ দুশ্চিন্তায় ভোগে। বাবা-ছেলের দৌরাত্ম্যের কারণে গ্রামে ছোটখাটো ঝগড়াঝাঁটি, ভয়ভীতি ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে। শিশু-কিশোররা তাদের ভয়ে বাড়ির বাইরে খেলতে যায় না। এলাকাবাসীর অভিমত, সমর ও শাওনকে থামানো না গেলে গোয়ালপাড়ার ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে উঠবে। গ্রামের মানুষ প্রশাসনের কাছে সরাসরি না গেলেও নিজেদের মধ্যে একটাই দাবি—এই মাদকাসক্ত বাবা-ছেলের হাত থেকে গ্রামকে রক্ষা করতে হবে।