
কলেজ ছাত্রী রুমিলার কাঁধে সমাজের গুরু দায়িত্ব
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : ২৬ সেপ্টেম্বর/২৫
রুমিলা মূর্মু জয়পুরহাটের পাঁচবিবি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অসহায় সম্বলহীন বাবা বিমল মূর্মুর ৪ ছেলে একমাত্র আদরের ছোট মেয়ে রুমিলা মূর্মু। বাবা-মার বয়স অনেক হলে কি হবে অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ না করলে চুলায় আগুন জ্বলে না। নিজের কোন জমি-জমা না থাকায় ৪ ভাইয়ের সংসারও চলে মানুষের বাড়িতে কাজ করে। অল্প আয়ে ভাইদের সংসার চলাই কষ্ট কর সেখানে বৃদ্ধ বাবা-মাকেই দেখবে কেমনে। পক্ষান্তরে আমার পড়ালেখা সহ যাবতীয় খরচ দেওয়া ত দূরের কথা ভাইদের এমন কথা বলে, রুমিলা। সে আরো বলে, বাবা-মা ও আমি আলাদা খাই। তাদের বয়স বেশি হওয়ায় শ্রমিকের কাজ আর তেমন করতে পারে না। সংসারের আয়ের উপার্জনকারী বলতে গেলে এখন একমাত্র আমিই। কলেজে পড়ালেখার খরচ সংসারের খবর আমাকেই করতে হয়। এজন্য আমি নিজে পড়ালেখার পাশাপাশি গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াই এবং বিশেষ করে ধান কাটা ও রোপনের সময় কলেজ প্রাইভেট বন্ধ করে শ্রমিকের কাজ করি। এত অভাবের মধ্যে থেকেও তাদের পূর্ব-পুরুষদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আয়োজন করছে রুমিলা মূর্মু। সমাজের প্রায় সবাই অতি গরীব হওয়ায় পুজার আয়োজনের জন্য আগে থেকেই সে শ্রমিকের কাজ ও প্রাইভেট পড়ায়ে টাকা জমা করে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের নওদার পশ্চিমপাড়া আদিবাসী পল্লীতে জরাজীর্ণ মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রুমিলা মূর্মুর প্রতীমা তৈরির কাজ চলছে। উপজেলার প্রায় সবগুলো মন্দিরে প্রতিমার রং ও ডেকোরেটর কাজ শেষ হলেও টাকার অভাবে তারটা এখনো হয়নি। তিনি বলে, প্রতিমা তৈরীর মালাকার খরচ ১৫ হাজার, ঠাকুর ও পুজার উপকরণ ক্রয় ১০ হাজার, মন্দিরের আলোক সজ্জা ডেকোরেটর ১২ হাজার সহ আনুসাঙ্গিক আরো (১০-১২) হাজার টাকার প্রয়োজন। সরকারি বরাদ্দের চাল থেকে ২০ হাজার টাকা ও সবাই মিলে কিছু কিছু দিয়েছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি খগেন মার্ডি বলেন, আমরা সবাই তো গরীব দিন আনি দিন খাই। এবারের পুজার খরচের বেশিরভাগ টাকা রুমিলাই দিয়েছে। এবছর আমরা সবাই রুমিলাকে মন্দির কমিটির সম্পাদক করেছি। রুমিলা মূর্মু বলে, সবাই মিলে যেহেতু আমাকে এত বড় দ্বায়িত্ব দিয়েছে এজন্য পুজায় নতুন জামা-কাপড় না নিয়ে এখানেই খরচ করছি।