
রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: ঘুষের মাফিয়াখানা, ফয়সাল-সাব-রেজিস্ট্রার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চলছে ভয়ঙ্কর ঘুষ বাণিজ্য। অভিযোগ উঠেছে—অফিস সহকারী ফয়সাল ও বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রারের নীরব সমর্থনে প্রতিদিন কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। ঘুষ ছাড়া কোনো দলিলের কাজ এগোয় না। বরং ঘুষের বিনিময়ে তৈরি হচ্ছে জাল দলিল, বদলে যাচ্ছে জমির শ্রেণি, হারিয়ে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিটি দলিলের নামে ন্যূনতম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। দলিল লেখক ও নকল নবীসদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে অফিস বন্ধ হওয়া পর্যন্ত এসব টাকা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন বিকেলে সমস্ত টাকা জমা দিতে হয় ফয়সালের কাছে, যার বড় অংশ চলে যায় সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে।স্থানীয় সূত্র বলছে, ফয়সাল দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসে থেকে মাফিয়ার মতো প্রভাব বিস্তার করছেন। সাব-রেজিস্ট্রার বদল হলেও তার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে। এমনকি একাধিকবার বদলির আদেশ এলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত পুনর্বহাল হয়েছেন তিনি। তার ইঙ্গিত ছাড়া কোনো কাজ সম্পন্ন হয় না।অভিযোগ রয়েছে, ফয়সাল ভূমি কর্মকর্তাদের নাম, সিল ও স্বাক্ষর জাল করে জাল দলিল তৈরি করেন। এর মাধ্যমে জমি দখল, মালিকানা হাতবদল ও ভূমি শ্রেণি পরিবর্তনের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ কাজে কিছু অসাধু দলিল লেখক ও নকল নবীসও সরাসরি জড়িত। সরকারের বিপুল রাজস্ব এভাবে লুটপাট হচ্ছে বলে জানা গেছে।
একজন সাধারণ অফিস সহকারীর সরকারি বেতনে বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্ভব নয়। অথচ ফয়সাল নিয়মিত প্রাইভেটকারে চলাফেরা করেন। শুধু তাই নয়, চাকরির সুবাদে গত কয়েক বছরে স্ত্রীর নামে ও বেনামে জমি-বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘুষের টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক বলেন— অফিস খরচ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো ফাইল সই করেন না। প্রতিদিন বিকেলে টাকা জমা দিতে হয় ফয়সালের কাছে। ঘুষ না দিলে কোনো কাজ এগোয় না। আরেক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—আমরা বাধ্য হয়েই এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় অংশ নিই। না হলে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হয়।স্থানীয়দের মতে, রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এখন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কবলে, যা কার্যত একটি ঘুষের কারখানায় পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের একটাই দাবি—দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যেন অবিলম্বে তদন্ত শুরু করে এবং ফয়সাল-সাব-রেজিস্ট্রার সিন্ডিকেটসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনে।