
তদন্তে পক্ষপাতের অভিযোগ,রাজশাহীতে পুনঃতদন্তের দাবি সংবাদ সম্মেলনে
পাভেল ইসলাম মিমুল
দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর থানার কথিত আজাদুল হত্যা মামলার তদন্তে পক্ষপাত ও অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে মামলাটির পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর শেরে বাংলা থানা (ডিএমপি) এলাকায় দায়ের করা মামলা নং–১১–এর তদন্তে একাধিক অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। মামলাটি শুরুতে দণ্ডবিধির ৩৪১/৩২৬/৩০৭/
৫০৬/১১৪ ধারায় দায়ের করা হলেও পরে ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়।
পরিবারের সদস্যদের দাবি,মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা—মোসাব্বেরুল হক চিশতি,ইমরুল কায়েস, ইসলাম সরকার ও মোজাম্মেল—সবাই দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা। ঘটনার স্থান ছিল ঢাকার শেরে বাংলা নগর এলাকায়,কিন্তু রহস্যজনকভাবে তদন্তের দায়িত্ব স্থানীয় বিরামপুর থানা পুলিশের হাতে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মোসাব্বেরুল হক চিশতি ও ইমরুল কায়েসকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।
পরে ২০০৯ সালে দিনাজপুর জেলা রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থাকায় রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির নির্দেশে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়,ঘটনার সময় আসামিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টে তাদের অবস্থান দিনাজপুরের বিরামপুর টাওয়ারে পাওয়া যায়— যা ঢাকায় উপস্থিত না থাকার প্রমাণ দেয়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়,বাদী ও আসামি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ ছিল।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত আসামি মোসাব্বেরুল হক চিশতি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইমরুল কায়েসকে জামিনে মুক্তি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মৃত আজাদুল ইসলাম মার্কিন প্রবাসী ইজাহারুল হককে বিদেশে নেওয়ার জন্য সাত লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশে না নেওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং পরে মামলা-মোকদ্দমা শুরু হয়।
তবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী মো. রফিকুল ইসলাম তদন্তকারীদের সামনে হাজির হননি এবং সাত লাখ টাকার দাবির কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। আরও বলা হয়, ঘটনাস্থল রাজধানীর শেরে বাংলা থানা এলাকায় হলেও বাদী সেখানে বসবাসরত কোনো ব্যক্তিকে সাক্ষী না করে দিনাজপুরের হাকিমপুর থানার কয়েকজনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেন,যা তদন্তকারীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন,মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের জড়ানো হয়েছে। তারা বলেন, “তদন্তে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ও পক্ষপাতমূলক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষভাবে পুনঃতদন্ত চাই, যাতে প্রকৃত হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসে।”
তারা আরও বলেন, “এই মামলার কারণে আমাদের পরিবার বছরের পর বছর মানসিক ও সামাজিকভাবে নিপীড়িত। পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তের কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, “ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ ঘটনার নিরপেক্ষ পুনঃতদন্ত জরুরি। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই— প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ও নিরপরাধদের মুক্তি দিতে পদক্ষেপ নিন।