বুলবুল আহমেদ ও ফারুক: ঢালিউডের স্বর্ণযুগের দুই ধারা
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়, সেই সত্তরের ও আশির দশকের দুই কিংবদন্তী অভিনেতা হলেন বুলবুল আহমেদ এবং ফারুক। তাঁদের অভিনয় দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া, তবে তাঁরা পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন সমাজের দুই ভিন্ন চিত্র।
বুলবুল আহমেদ পরিচিত ছিলেন তাঁর মার্জিত, শহুরে এবং রোমান্টিক ভাবমূর্তির জন্য। তাঁর অভিনয় দক্ষতা ছিল সূক্ষ্ম এবং বুদ্ধিদীপ্ত, যা তাঁকে জটিল এবং সংবেদনশীল চরিত্রগুলোতে সফল করে তুলেছিল। 'সীমানা পেরিয়ে' বা শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস'-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় ছিল পরিশীলিত ও আবেগপূর্ণ। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল মূলত শিক্ষিত ও শহুরে দর্শকদের মধ্যে, যারা তাঁর আভিজাত্য এবং সাবলীল অভিনয়ে মুগ্ধ ছিলেন। বুলবুল আহমেদ যেন ছিলেন টলিউডের 'সৌম্য নায়ক'-এর প্রতীক।
অন্যদিকে, ফারুক ছিলেন 'মিয়া ভাই' বা সাধারণ মানুষের হিরো হিসেবে পরিচিত। তিনি সফলভাবে গ্রামীণ বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক চরিত্রে অভিনয় করতেন, যেখানে তাঁর সহজাততা, প্রাণবন্ততা এবং আবেগের তীব্রতা ছিল প্রধান আকর্ষণ। 'লাঠিয়াল', 'সুজন সখী' বা 'সারেং বউ'-এর মতো ছবিগুলোতে তাঁর অভিনয় গণমানুষের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ তৈরি করেছিল। ফারুকের জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক এবং তৃণমূল পর্যায়ে, যা তাঁর মাটির কাছাকাছি থাকা চরিত্র এবং বলিষ্ঠ অভিনয়ের ওপর নির্ভর করত।
তুলনা করলে দেখা যায়, বুলবুল আহমেদ যেখানে শহুরে পরিশীলিত রোমান্সের প্রতীক, ফারুক সেখানে গ্রামীণ জীবনের আবেগ ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। এই দুই বিপরীত ধারা সত্ত্বেও, তাঁরা দু'জনেই তাঁদের স্বতন্ত্র পথে হেঁটে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে এক গৌরবময় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। janas media