মীনা কুমারী ও স্মিতা পাতিল: দুই যুগের আবেগের প্রতিচ্ছবি
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মীনা কুমারী এবং স্মিতা পাতিল—এই দুই অভিনেত্রী নিজেদের অভিনয়ের মাধ্যমে নারীদের আবেগ, সংগ্রাম ও শক্তিকে এমনভাবে তুলে ধরেছিলেন যা আজও কিংবদন্তী হয়ে আছে। যদিও তাঁরা ভিন্ন দশকে (মীনা কুমারী: ৫০-৬০, স্মিতা পাতিল: ৭০-৮০) প্রধানত সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের অভিনয় দক্ষতা এবং পর্দায় আবেগের গভীরতা ছিল উভয় ক্ষেত্রেই অতুলনীয়।
মীনা কুমারী পরিচিত ছিলেন 'ট্র্যাজেডি কুইন' নামে, যিনি পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দর্শকদের হৃদয়কে বিষাদ এবং বেদনায় পূর্ণ করে তুলেছিলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর, কাব্যিক লাবণ্য এবং দুঃখী নারীর চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় ছিল তুলনাহীন। গুরু দত্তের 'সাহিব বিবি অউর গুলাম'-এ 'ছোটি বহু'-এর চরিত্রটি কিংবা তাঁর জীবনের শেষ কালজয়ী ছবি 'পাকিজা'-তে তাঁর উপস্থিতি চিরস্মরণীয়। তিনি এমন এক যুগে জনপ্রিয়তা লাভ করেন, যখন আবেগপূর্ণ মেলোড্রামা ছিল হিন্দি সিনেমার মূল ভিত্তি। তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া, কারণ তিনি পর্দায় এমন এক গভীর বিষাদ ফুটিয়ে তুলতেন যা দর্শকদের নিজেদের ব্যক্তিগত কষ্টের সঙ্গে মিশে যেত। তাঁর অভিনয় ছিল মহৎ এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল, যা তাঁকে ক্লাসিক্যাল বলিউডের এক অপরিসীম উচ্চতায় স্থাপন করেছিল।
অন্যদিকে, স্মিতা পাতিল ছিলেন সত্তর ও আশির দশকের সমান্তরাল বা নিউ ওয়েভ সিনেমার অন্যতম মুখ। তিনি সেই সময়ে উত্থান করেন, যখন বলিউড তার গল্পের ধরনে পরিবর্তন আনছিল। শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালানির মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে তিনি 'মন্থন', 'ভূমিকা', এবং 'মির্চ মসালা'-র মতো ছবিতে অভিনয় করেন। স্মিতা তাঁর কাঁচা বাস্তবতা (Raw Realism) এবং অগ্নিময় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি চিরাচরিত গ্ল্যামারাস নায়িকার ধারণা ভেঙে দেন এবং সমাজ, রাজনীতি ও নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলা চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর জনপ্রিয়তা এসেছিল তাঁর অভিনয় দক্ষতার গভীরতা এবং তাঁর সাহসী, আপসহীন চরিত্র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তিনি ছিলেন 'চিন্তাশীল' দর্শকদের প্রিয় অভিনেত্রী।
তুলনা করলে দেখা যায়, মীনা কুমারী যেখানে ধ্রুপদী সৌন্দর্যের মোড়কে কাব্যিক ট্র্যাজেডি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, স্মিতা পাতিল সেখানে বাস্তবতার জমিতে দাঁড়িয়ে নারীর সংগ্রাম ও বিদ্রোহের কথা বলেছিলেন। দু'জনেই তাঁদের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী চরিত্রগুলিকে পর্দায় এনেছেন এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসকে তাঁদের অতুলনীয় অভিনয়ের মাধ্যমে চিরস্থায়ীভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। janas media