
মৌসুমী চ্যাটার্জি ও আরতি ভট্টাচার্য: দুই বাংলার অভিনয়ের ঝলক
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ষাট ও সত্তরের দশকে যাঁরা দর্শকদের মন জয় করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে মৌসুমী চ্যাটার্জি এবং আরতি ভট্টাচার্য অন্যতম। তাঁদের কর্মক্ষেত্র মূলত ভিন্ন হলেও, অভিনয় দক্ষতা এবং স্বতন্ত্র জনপ্রিয়তা তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিংবদন্তী করে তুলেছে।
মৌসুমী চ্যাটার্জি তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু করেন বাংলা ছবি ‘বালিকা বধূ’-র মাধ্যমে, কিন্তু দ্রুতই তিনি বলিউডে পা রাখেন এবং জাতীয় তারকা হয়ে ওঠেন। তাঁর মূল শক্তি ছিল তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাণবন্ত এবং সহজাত অভিনয়শৈলী। তিনি অনায়াসে হালকা রোমান্স থেকে শুরু করে গভীর আবেগপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে পারতেন। ‘অনুরাগ’, ‘রোটি কাপড়া অউর মাকান’ বা ‘অঙ্গুর’-এর মতো ছবিগুলিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। মৌসুমীর জনপ্রিয়তা ছিল সর্বভারতীয়, যা তাঁর সাবলীলতা এবং এক ধরনের ‘গার্ল নেক্সট ডোর’ ইমেজের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর মুখের অভিব্যক্তি ছিল দ্রুত এবং গভীর, যা চরিত্রের আবেগকে ফুটিয়ে তুলত।
অন্যদিকে, আরতি ভট্টাচার্য তাঁর অভিনয় দক্ষতার জন্য মূলত বাংলা চলচ্চিত্র জগতে পরিচিত। তাঁর এক্সপ্রেসিভ চোখ, শক্তিশালী সংলাপ ডেলিভারি এবং নাট্যধর্মী চরিত্র অভিনয়ে তাঁর দক্ষতা ছিল অনবদ্য। তিনি অনায়াসে মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের বধূ বা সংবেদনশীল নারীকে ফুটিয়ে তুলতেন। উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চ্যাটার্জীর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল খুবই সফল। ‘আমি রতন’, ‘দত্তা’-র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় তাঁকে বাঙালি দর্শকদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। আরতি ভট্টাচার্যের জনপ্রিয়তা তাঁর আন্তরিকতা এবং শক্তিশালী নাট্য-অভিনয়ের ওপর নির্ভর করত, যা বাংলা চলচ্চিত্রের পরিবারের গল্পগুলিতে গভীরতা এনে দিত।
তুলনা করলে দেখা যায়, মৌসুমী চ্যাটার্জি যেখানে স্বতঃস্ফূর্ততা ও সর্বভারতীয় স্টারডম পেয়েছিলেন, আরতি ভট্টাচার্য সেখানে বাঙালির ঘরোয়া আবেগ ও নাট্যিক গভীরতার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। দু’জনেই তাঁদের স্বতন্ত্র প্রতিভার মাধ্যমে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন। janas media