1. live@www.kpcnewsmedialimited.online : News_AdMIN : KPC news media Limited KPC news media Limited
  2. info@www.kpcnewsmedialimited.online : KPC NEWS Media Limited :
রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

লেডি বাইকার আলিফা বাইক চালনা থেকে অনৈতিক ব্যবসার অন্ধকার জগতে (পর্ব-১)

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

লেডি বাইক চালনা থেকে অনৈতিক ব্যবসার অন্ধকার জগতে (পর্ব-১)

Foiz রিপোর্ট : Sub Heading কোম্পানির নজরে আসা ও সুযোগের সদ্ব্যবহার

** সম্পদের বিস্তার
** বিলাসী জীবন নিয়ে প্রশ্ন
** লং ট্যুর ও অভিযোগের পাহাড়
** অঘোষিত স্বামী ও শেল্টার দাতা
** বাইক শেখানো থেকে আয়ের পথ
** গোপন নেটওয়ার্ক ও সাপ্লাই চেইন
** দেহ ব্যবসা ও রোহিঙ্গা তরুণীদের সম্পৃক্ততা
** পারিবারিক জীবনের ভাঙন ও বেপরোয়া পদক্ষেপ

কক্সবাজার শহরের ফায়ারসার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় বাস করা মাহনুর আলিফা আলাইভা, পরিচিত নাম লেডি বাইকার আলিফা। বাইকপ্রেমী তরুণী হিসেবে ২০২২ সালে আলোচনায় আসেন তিনি। নাবিল মোটরস থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ইয়ামাহার জনপ্রিয় R15 বাইক ক্রয় করে যোগ দেন কক্সবাজার ইয়ামাহা রাইডার ক্লাবে। সেখানে একমাত্র নারী বাইকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, পুরুষ বাইকারদের ভিড়ে নারী হিসেবে আলিফার উপস্থিতি অস্বাভাবিক নজর কাড়ে। বিষয়টি চোখে পড়ে ইয়ামাহার বাংলাদেশে ডিস্ট্রিবিউটর এসিআই মোটরসের। কোম্পানি তাকে প্রমোশনাল প্রোগ্রাম ও ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে সুযোগ দেয়। ঢাকা বা অন্য শহরে ক্যাম্পেইনে গেলে বিমান ভাড়া থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করত প্রতিষ্ঠানটি।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আলিফা কোম্পানির কাছ থেকে মাসিক সাড়ে ৩ হাজার টাকার ভাতা পেতেন। তবে একই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়, কারণ বাইক চালানো শেখিয়ে তিনি নিজেই আয় করতে শুরু করেছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাবিল মোটরসের ম্যানেজার মাহফুজ।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি স্কুটি কিনে মেয়েদের বাইক চালানো শেখানো শুরু করেন আলিফা। প্রতিজনের কাছ থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিতেন তিনি। এর মাধ্যমে কক্সবাজার লেডি বাইকার গ্রুপ গড়ে তোলেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, শেখানোর আড়ালে ধীরে ধীরে অন্য এক আয়ের পথ বেছে নেন তিনি।

প্রতিমাসে কয়েকবার লেডি বাইকার ও পুরুষ বাইকারদের নিয়ে বান্দরবানসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় লং ট্যুরে যেতেন আলিফা। এসময় নারীদের পুরুষদের সঙ্গে রাত্রীযাপনে প্রলুব্ধ করে মোটা অংকের টাকা নিতেন। লেডি বাইকারদের হাতে সামান্য টাকা পৌঁছালেও মূল অংশ নিজের কাছে রাখতেন।
এছাড়া স্থানীয় সূত্রের দাবী, কিছু লেডি বাইকারদের লং ট্যুরের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদক পাচারের মতো অভিযোগ শোনা যায়। যদিও এসব অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি, তবু গুঞ্জন রয়ে গেছে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আলিফার বিয়ে হয়েছিল এক বিমান পাইলটের সঙ্গে। তবে অবাধ মেলামেশা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সেই সংসার ভেঙে যায়। বর্তমানে ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে আলিফা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং ইয়ামাহা রাইডার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন।

আলিফার দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও তার জীবনযাপন বিলাসী। কক্সবাজার শহরের তিনটি রেস্টুরেন্ট— লাবনী পয়েন্ট, স্বপ্নীল সিন্ধু ও হোটেল নিসর্গে তিনি নিয়মিত বসতেন। শুধু এক মাসেই এই তিন রেস্টুরেন্টের বিল মেটানো হয় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রশ্ন উঠেছে, এত টাকা আসছে কোথা থেকে?

অভিযোগ আছে, আলিফা রোহিঙ্গা তরুণী এবং কক্সবাজারের স্থানীয় দেহ ব্যবসায়ী তরুণীদের বাইক শেখানোর আড়ালে দেহ ব্যবসায় যুক্ত করেন। তার ফেসবুক পোস্টে বাইক শেখানোর ছবিতেই দেখা যায় রোহিঙ্গা ও অন্যান্য তরুণীদের উপস্থিতি। তাদেরকে ব্যবহার করে তিনি বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।

কক্সবাজারে আসা অন্যান্য লেডি বাইকারদের মাধ্যমেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন অপকর্ম চালানো হয় বলে গুঞ্জন আছে। নতুন শিক্ষানবিশদের জড়িয়ে পড়তে হয় নানা স্ক্যান্ডালে। ভিডিও কলের মাধ্যমে অনৈতিক কাজ করে টাকা উপার্জন করা তাদের অনেকে জন্য এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এমনকি মদের বারে মদ্যপান করে মাতলামির ভিডিওও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেছেন আলিফা।

এছাড়াও বর্তমানে আলিফার রয়েছে ৫টি বাইক এবং সুগন্ধা পয়েন্টের কেএফসি রোডে সৈকত আবাস ভবনের ৭ম তলার বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট (এন-৭ নম্বর)। এসব সম্পদ ও অঢেল টাকার উৎস নিয়েই এখন কক্সবাজারে গুঞ্জন তীব্র।

ঢাকায় যাতায়াতের সময় সঙ্গে থাকেন এক অঘোষিত স্বামী মোস্তাফিজ, যিনি তার অর্থের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া আরেক শেল্টারদাতা আবির, যাকে তিনি নিজের ভাই বলে পরিচয় দেন। পাশাপাশি মোরশেদ, শহীদ, নয়ন ও ইয়াসিনসহ একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা মিডিয়া লবিং থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবে গুণ্ডা বাহিনী হিসেবে কাজ করে। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই প্রতিপক্ষকে ঘিরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।

অঘোষিত স্বামী হিসেবে পরিচিত মোস্তাফিজ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কক্সবাজার ইয়ামাহা রাইডার ক্লাবের সদস্য আর আলিফা সেখানে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো ক্যাম্পেইন হলে খরচ বহন করে প্রতিষ্ঠানটি, আর আমরা বিভিন্ন ট্যুরে অংশ নিই। ঢাকায় কোনো প্রোগ্রাম হলে আলিফা কোম্পানির খরচে বিমানে যায়, আর আমরা সাধারণত বাসে যাই।” বেশ কয়েকবার আলিফার সঙ্গে বিমানে ভ্রমণের প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, “আলিফা কোম্পানির খরচে যায়, আমি নিজের অর্থায়নে যাই।” আলিফার টাকায় চলেন কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তাফিজের উত্তর, “আলিফার টাকায় কেন চলব? আমি নিজেই ব্যবসা করি।”

আলিফাকে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নয়ন বলেন, তিনি ইয়ামাহা বাইক রাইডার ক্লাবের সদস্য হওয়ায় লেডি বাইকার আলিফার সঙ্গে তার পরিচয়। নয়নের দাবি, আলিফা অনেক মেয়েকে বাইক চালানো শেখান, তাই কে ভালো আর কে খারাপ, সেটি বোঝার সুযোগ তো নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু জানেন, আলিফাকে তিনি ভালো মানুষ হিসেবেই চেনেন।

তবে নয়নের দাবি, তিনি গত ৮/৯ মাস ধরে কক্সবাজার ইয়ামাহা রাইডার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আছেন। সেই সুবাদেই লেডি বাইকার আলিফার সঙ্গে তার পরিচয়। এর বাইরে আলিফার সঙ্গে তার অন্য কোনো সম্পর্ক নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তিনি।

আলিফার আরেক শেল্টারদাতা হিসেবে পরিচিত আবির এ বিষয়ে বলেন, আলিফাকে তিনি আপন বোনের মতো মনে করেন। তার দাবি, আলিফা বিভিন্ন মেয়েদের বাইক চালানো শেখান, তবে এর বাইরে কোনো অনিয়ম তিনি দেখেননি। ভাই পরিচয় দেওয়ায় তার কাছে আলিফার ফ্ল্যাট ও পাঁচটি বাইকের বিষয়ে জানতে চাইলে আবির জানান, আলিফার একটি R15 বাইক ও একটি ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত স্কুটি রয়েছে। এর বাইরে দুইটি বাইক আবির তার নিজের দাবি করলেও বাকি একটি বাইকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। ফ্ল্যাটের বিষয়েও তিনি অজ্ঞতার কথা জানান।

আলিফার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে আবির বলেন, বাইক চালানো শেখিয়েই সে উপার্জন করে, এর বাইরে অন্য কোনো আয়ের খোঁজ তিনি জানেন না। শেল্টার দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাইবোনের মতো। এখানে শেল্টার দেওয়ার কিছু নেই। আলিফা সৎ পথে বাইক চালানো শিখিয়ে ইনকাম করছে।’

রোহিঙ্গা তরুণী ও দেহ ব্যবসায়ী তরুণীদের বাইক চালানো শেখানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে আবির জানান, ‘বোন হিসেবে আমি তাকে বহুবার বলেছি যেন খারাপ মেয়েদের বাইক না শেখায়, যাতে বদনামের শিকার না হয়।’ তিনি আলিফাকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘সে বাইক চালানো শিখিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছে।’ “তবে আলিফার শেল্টারদাতা হিসেবে পরিচিত অপর শহীদ ও ইয়াসিনকে সনাক্ত করা যায়নি এবং তাদের বক্তব্যও পাওয়া সম্ভব হয়নি।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে বক্তব্যের উদ্দেশ্যে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠালে মাহনুর আলিফা লিখিতভাবে দাবি করেন, তিনি ইয়ামাহা রাইডার ক্লাবের মডারেটর ও ট্রেইনার এবং ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের প্রচারক হিসেবে কাজ করে আসছেন। কোম্পানির প্রতিনিধি তাকে নিয়মিতভাবে খুঁজে পান এবং অফিসিয়াল কর্মসূচিতে কোম্পানির খরচে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জানান, ডিলার পরিবর্তনের ফলে এখন লেনদেনের রেকর্ড নতুন ডিলারের হাতে, তাই এই প্রসঙ্গে বিভ্রান্তি থাকতে পারে।

আলিফা বলেন, “যেকোনো পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি হলে কি সে স্কুটি/বাইক শিখতে পারবে না? আমি যে কোনো ইচ্ছুক নারীকে বাইক-স্কুটি চালানো শেখাই। এতে কারও পেশা, পরিচয় বিচার করা উচিত নয়। আমি অসৎ পথে অর্থ উপার্জনকে নিন্দা করি।” তিনি মাদক-সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মাদক দমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কার্যক্রম রয়েছে এবং তারা ন্যায়বিচার করবেন। রেস্টুরেন্ট বিল নিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, “মাসে কয়েক লাখ টাকার বিল” বিষয়টি হাস্যরসাত্মক, এমন পরিসংখ্যান ভিত্তিহীন।

পরিবার ও আর্থিক সক্ষমতা সম্পর্কে আলিফা জানান, তার বাবা-বাড়ি, শশুরবাড়ি ও নিজস্ব অবস্থান সচ্ছল এবং তিনি সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করেন। যেসব ব্যক্তির নাম তিনি পেয়েছেন, মোস্তাফিজ, শহীদ, আবির, নয়ন ও ইয়াসিন। তাদের সবাই কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ; তাদের মধ্যে অনেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি তাদের নিকট স্নেহবোধ করেন।

শেষে তিনি অভিযোগগুলোকে “মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন” বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, একজন নারী হিসাবে অন্য নারীকে এগিয়ে নেওয়ায় তাকে বাধা দিতে অনেকে এভাবে মিথ্যে প্রচারণা চালাতে পারে। যা সুশীল সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, অশ্লীল কথায় ঘিরে তাঁর দক্ষতায় বাধা সৃষ্টি করা এবং মানহানির চেষ্টা চলছে।

পরবর্তী পর্বে থাকছে:
শেল্টার দাতা, দেহ ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক ও রোহিঙ্গা তরুণীদের কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই ভয়াবহ সব তথ্য নিয়ে চলমান অনুসন্ধান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট