
অনুভা গুপ্তা ও অঞ্জনা ভৌমিক: দুই দশকের অভিনয়ের ধারা
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ছিল স্বর্ণালী সময়, আর এই দুটি সময়ের জনপ্রিয়তাকে ভিন্ন আঙ্গিকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তা এবং অঞ্জনা ভৌমিক। তাঁদের অভিনয় দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তার ধরণ ছিল স্বতন্ত্র, কিন্তু দু’জনেই বাংলা সিনেমাকে এক দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছিলেন।
পঞ্চাশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তা পরিচিত ছিলেন তাঁর স্বাভাবিক, আন্তরিক এবং সাবলীল অভিনয়শৈলীর জন্য। তিনি একই সঙ্গে কমেডি এবং গভীর নাট্যধর্মী চরিত্রে সমান পারদর্শী ছিলেন। তাঁর অভিনয় দক্ষতার মূল শক্তি ছিল তাঁর অভিব্যক্তিপূর্ণ চোখ এবং চরিত্রকে সরলভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা। তাঁর সময়ের দর্শকরা তাঁর মধ্যে এক ধরনের সহজ মাধুর্য এবং আন্তরিকতা খুঁজে পেতেন। অনুভার জনপ্রিয়তা ছিল মূলত তাঁর বহুমুখী প্রতিভা এবং অভিনয়কে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষমতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি সেই যুগের সিনেমাকে একটি স্থির ভিত্তি দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, ষাটের দশকে চলচ্চিত্রের পর্দায় অঞ্জনা ভৌমিকের আবির্ভাব ছিল এক নতুন গ্ল্যামার এবং পরিশীলিত চেতনার প্রতীক। তাঁর মার্জিত সৌন্দর্য, সহজাত আকর্ষণ এবং সুচিত্রা সেন-পরবর্তী সময়ে উত্তম কুমারের সঙ্গে সফল জুটি তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ‘থানা থেকে আসছি’, ‘নায়িকা সংবাদ’ বা ‘সন্ন্যাসী রাজা’-র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় ছিল বুদ্ধিদীপ্ত এবং আবেগপূর্ণ, যা জটিল শহুরে চরিত্রে বিশেষ মাত্রা যোগ করত। অঞ্জনার জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর কমনীয়তা, আধুনিক ভাবমূর্তি এবং চরিত্রে এনে দেওয়া মানসিক গভীরতার জন্য। তিনি ছিলেন ষাটের দশকের গ্ল্যামারাস নায়িকা।
এই দুই অভিনেত্রী—অনুভা গুপ্তা তাঁর সহজ অভিব্যক্তি দিয়ে এবং অঞ্জনা ভৌমিক তাঁর মার্জিত গ্ল্যামার দিয়ে—বাংলা চলচ্চিত্রের দুই দশক ধরে দর্শকদের হৃদয়ে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছিলেন। janas media