
শাবানা আজমি ও ডিম্পল কাবাডিয়া: অভিনয় ও গ্ল্যামারের দুই দিকপাল
বলিউডের সত্তর ও আশির দশককে যাঁরা নিজেদের স্বতন্ত্র অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নতুন সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে শাবানা আজমি এবং ডিম্পল কাবাডিয়া অন্যতম। এই দুই অভিনেত্রী তাঁদের কর্মজীবনে বলিউডের এক সুন্দর দ্বৈত সত্তা প্রতিফলিত করেন—একজন ছিলেন বাস্তববাদী আর্ট ফিল্মের প্রতিচ্ছবি, অন্যজন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য গ্ল্যামার এবং বাণিজ্যিক সাফল্যের প্রতীক।
শাবানা আজমি, যাঁর অভিনয় দক্ষতার মূল ভিত্তি ছিল নিবিড় বাস্তবতা এবং গভীর অধ্যয়ন। পুনের ফিল্ম ইনস্টিটিউট (FTII) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি শ্যাম বেনেগালের ‘অঙ্কুর’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আসেন। তিনি মূলধারার গ্ল্যামার থেকে দূরে থেকে ‘আর্থ’, ‘মান্ডি’, এবং ‘মাসুম’-এর মতো সমান্তরাল ধারার চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনয় দক্ষতা এতটাই নিপুণ ছিল যে তিনি সহজেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের জটিল, দুর্বল এবং প্রতিবাদী নারীকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। তাঁর বারবার জাতীয় পুরস্কার জয় তাঁর অভিনয় দক্ষতার শ্রেষ্ঠত্বেরই প্রমাণ। শাবানার জনপ্রিয়তা এসেছিল তাঁর শক্তিশালী নারী চরিত্রগুলো এবং তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে, যা তাঁকে কেবল অভিনেত্রী নয়, একজন চিন্তাবিদ হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করে। তিনি পর্দায় নিয়ে এসেছিলেন এমন নারীদের, যাঁদের সঙ্গে সাধারণ দর্শক সহজেই নিজেদের সংযোগ খুঁজে পেতেন।
অন্যদিকে, ডিম্পল কাবাডিয়ার উত্থান ছিল রূপকথার মতো। মাত্র ষোলো বছর বয়সে ‘ববি’ (Bobby)-র মতো ব্লকবাস্টার ছবির মাধ্যমে তাঁর অভিষেক হয়, যা তাঁকে রাতারাতি টিন আইকনে পরিণত করে। দীর্ঘ বিরতির পর তাঁর প্রত্যাবর্তন ছিল আরও শক্তিশালী। ‘সাগর’, ‘লুকানো’ এবং সমালোচক-প্রশংসিত ‘রুডালী’-র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল গ্ল্যামারের জন্য নন, বরং সূক্ষ্ম আবেগের প্রকাশেও তিনি পারদর্শী। তাঁর সৌন্দর্য এবং রহস্যময় স্ক্রিন প্রেজেন্স তাঁকে সেই সময়ের অন্যতম শীর্ষ অভিনেত্রী করে তুলেছিল। বিশেষ করে আশির দশকের শেষ দিকে এবং নব্বইয়ের দশকে ডিম্পল তাঁর চরিত্রে যে গভীরতা এনেছিলেন, তা তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি বাণিজ্যিক ছবিতেও চরিত্রের সংবেদনশীলতাকে দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন।
তুলনা করলে দেখা যায়, শাবানা আজমি যেখানে পদ্ধতিগত এবং বাস্তববাদী অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমার গভীরতাকে তুলে ধরেছেন, ডিম্পল সেখানে অপ্রতিরোধ্য গ্ল্যামার এবং সহজাত ক্যারিশমা দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন। তাঁরা দু’জনেই নিজস্ব পথে হেঁটে প্রমাণ করেছেন যে, বলিউডে নারী চরিত্রেরা কতটা শক্তিশালী এবং বহুমুখী হতে পারে। janas media